মসলা হিসেবে বহুল আলোচিত সুগন্ধযুক্ত উপাদান হল এলাচি। এটি বছরে ২বার জন্মে। প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদে অতি সমাদৃত এলাচ। এটি গরম মসলার অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ, একে মসলার রানীও বলা হয়। এটি সুগন্ধযুক্ত ও রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য রান্নাঘরে এর যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে। এটি রান্না,পিঠা-পায়েস সব রকম খাবারে ব্যবহৃত হয় এবং এমনকি এলাচ মসলা চায়ের প্রধান উপাদান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এটি মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে বেশিরভাগ লোকই জানেন না যে মশলার রানী হিসেবে পরিচিত এই এলাচ নানাভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। রান্না ছাড়াও এলাচ খেলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।
দুই ধরনের এলাচ হয়ে থাকে। ছোট এলাচ এবং বড় এলাচ। এলাচের এই দুটি রূপের মধ্যে আকার, রঙ এবং স্বাদের পার্থক্য রয়েছে। ছোট এলাচ দেখতে সবুজ,ছোট এবং লম্বাকৃতির। এটি খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করতে,সর্দি, কাশি, হজমের সমস্যা, বমি, প্রস্রাবের সমস্যা ইত্যাদি বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী। যেখানে বড় এলাচ প্রধানত মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি দেখতে কালো,বড় এবং লম্বাকৃতির।
এলাচের উপকারিতার তালিকা বেশ দীর্ঘ। কার্বোহাইড্রেট, ডায়েটারি ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ফসফরাস প্রধানত এলাচের মধ্যে পাওয়া যায়। এগুলো ছাড়াও এলাচের মধ্যে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আপনি যদি নিয়মিত এলাচের সঠিক মাত্রা গ্রহণ করেন তবে এটি অবশ্যই আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আসুন জেনে নেই এলাচের স্বাস্থ্য উপকারিতা-
এলাচ হেঁচকি থেকে মুক্তি দেয়- প্রায়শই, কারোর সাথে কথা বলার সময় হঠাৎ হেঁচকি হতে শুরু করে । এমন পরিস্থিতিতে এলাচ আপনার জন্য খুব কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে। হেঁচকি শুরু হলে একটি এলাচ মুখে রাখুন এবং কিছুক্ষণ ধীরে ধীরে চিবিয়ে রাখুন, এতে হেঁচকি দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে।
অস্থিরতা দূর করে- অনেকেরই অস্থিরতার সমস্যা হয়ে থাকে এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। অস্থিরতার কারণে বুক ধড়ফড় করে,ঘামতে থাকে ,মিশ্র অনুভূতি কাজ এটি একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হতে পারে। তবে এটি দূর করতে প্রতিনিয়ত একটি /দুটি এলাচ পানির সাথে জ্বাল করে খেতে পারেন। অথবা এলাচ মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে অস্থিরতা অনেকটাই কমে যাবে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করে-ভালো ভাবে মুখ পরিষ্কার করার পরও কারো কারো মুখে দুর্গন্ধ থেকে যায়। এটি বিব্রতর সমস্যার সৃষ্টি করে। এলাচ মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এ ছাড়াও মাড়ির ইনফেকশন,মুখের ঘা সহ দাঁত ও মাড়ির রক্তপাতসহ নানা সমস্যার সমাধানে এলাচ কার্যকরি।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে- এলাচে উপস্থিত পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের নিয়মিত এলাচ খাওয়া উচিত।
হাঁপানি প্রতিরোধে এলাচ- উচ্চ রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি এটি হাঁপানি রোগীদের জন্য একটি খুব দরকারি ওষুধ। এলাচের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ফুসফুসে রক্ত চলাচল ঠিক রাখে, যা ফুসফুসকে সুস্থ রাখে এবং কাশি বা হাঁপানির মতো রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
সর্দি-কাশি নিরাময়ে- আবহাওয়ার পরিবর্তন বা যেকোনো ধরনের সংক্রমণের কারণে অনেকেরই সর্দি-কাশি,গলা ব্যথা হয়ে থাকে। এলাচ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দ্রুত সর্দি-কাশি নিরাময়ে সাহায্য করে। মধুর সাথে এলাচ গুড়া মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা সেরে যায়।
মানসিক চাপ কমায়- যারা মানসিক চাপ বা বিষণ্ণতায় ভোগেন তারা মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন এলাচ বা এলাচ চা পান করতে পারেন। এলাচের সুগন্ধ মেজাজকে সতেজ রাখে। এলাচ চা পান করলে পেট, শ্বাসকষ্টের রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় এবং এটি মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়।
হজমে সাহায্য করে- একটি এলাচ চিবিয়ে খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি পরিপাকতন্ত্র সক্রিয় রাখে,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও হজম বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও বমি বমি ভাব,বুক জ্বালাপোড়া,পেট ফাঁপার মতো সমস্যার সমাধান করে এলাচ।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে- এলাচে থাকা বিশেষ কিছু উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি ক্যান্সারের কোষ গঠনে বাধা দেয়। শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে।