চা আমাদের প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের নিত্যসঙ্গী। জনপ্রিয় পানীয়গুলোর মধ্যে চা অন্যতম। চা যেমন জনপ্রিয় তেমনি ছোট বড় কমবেশি প্রত্যেকেরই পছন্দের পানীয়। এটি চিরসবুজ উদ্ভিদ প্রজাতির শুকনা পাতা থেকে তৈরি হয়। যা প্রশান্তি-দায়ক,সুগন্ধযুক্ত এবং স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে। এই চায়ে রয়েছে এক অভাবনীয় আকর্ষণ । চা স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা অনেকেরই অজানা। আসুন জেনে নেই স্বাস্থ্য রক্ষায় চায়ের গুণাগুণ-
প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং চা-পাতার বিভিন্নতার কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন রকমের চা হয়। যেমন-আদা চা,দুধ চা,লাল চা,মসলা চা,গ্রিন টি,ব্লাক টি ইত্যাদি। বিভিন্ন চায়ের বিভিন্ন ধরনের গুণাগুণ রয়েছে-
আদা চা-সর্দি,কাশি,গলা ব্যথা ঠান্ডার সমস্যায় আদা চা ওষধির মতো কাজ করে। এছাড়াও আদা চা হজমের সমস্যা এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
লাল চা-লাল চায়ে থাকা ট্যানিন ঠাণ্ডা,ফ্লু ও অন্ত্রের প্রদাহ থেকে প্রতিরোধ করে দেহকে সুরক্ষিত রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং স্ট্রেস কমায়। প্রতিনিয়ত লাল চা সেবনে পারকিনস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
কালো চা– চিনি এবং চা ছাড়া কালো চা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি পাচনতন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি হয়।
গ্রিন টি-বহুল পরিচিত গ্রিন টি এর অসংখ্য গুণাগুণ রয়েছে। চর্বি কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে গ্রিন টি। এটি শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গ্রিন টি এ বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায় এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
এটি চোখের নিচের কালো দাগ,ফোলা-ভাব দূর করে চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ কমায়। পুদিনা পাতা ও গ্রিন টি ফুটিয়ে ত্বকে টোনার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। গ্রিন টি এবং মধুর মিশ্রণ স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা হয় যা ত্বকের ময়লা দূর করে ত্বককে কোমল ও মসৃণ করে। কমবেশি অনেকেই ব্রণের সমস্যায় ভোগেন। ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গ্রিন টি অনেক বেশি কার্যকর। গ্রিন টি ত্বকের জ্বালাপোড়া ছাড়াই ত্বকের ব্রণ দূর করে।
পুদিনা চা-নিয়মিত মাথা ব্যথায় ভুগছেন। মাথা ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খান পুদিনা চা। পুদিনায় এমন কিছু মাসল রিল্যাক্স্যান্ট রয়েছে যা মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পুদিনা চা মাইগ্রেনের ব্যথা ও সাইনাসের ব্যথা কমাতেও বেশ কার্যকরী। একে এনার্জি বুষ্টারও বলা হয়।
ক্যাফেইন নামক উপাদানের জন্য চায়ের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। ক্যাফেইন হল একটি মৃদু উত্তেজক উপাদান যার ফলে চা পান করলে শরীর ঝরঝরে,সজীব এবং প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। এছাড়াও চায়ে থাকা বিভিন্ন উপাদান শরীরে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের বিষাক্ত উপাদান নিঃসরণে সাহায্য করে।
চায়ে থাকা পলিফেনলস এবং ক্যাটেচিন ফ্রি রেডিক্যালস তৈরিতে বাধা দেয় এবং কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। একারণে চা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হার্টকে সুস্থ রাখতেও চা অনেক কার্যকর। লিকার চায়ে বিভিন্ন এনজাইম থাকে যা হার্টে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে। তাই প্রতিদিন এককাপ লিকার চা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ।
কিছুটা চা-পাতা পানিতে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে ত্বকের জ্বালাপোড়া করা বা লালচে অংশে লাগালে জ্বালাপোড়া কমে যায়। নিয়মিত টি ব্যাগ ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের খসখসে ভাব,শুষ্কতা ও র্যাস দূর হয়। এছাড়াও চা-পাতা ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে বেটে ত্বকে লাগালে ত্বকের দাগ দূর হয়,ত্বক পরিষ্কার এবং মসৃণ হয়।
প্রত্যেকেই সুন্দর কোমল ঠোঁট পেতে চায়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ঠোঁট ফেটে যায়,ঠোঁটের আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। ঠোঁটের এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করুন ব্যবহৃত গ্রিন টি ব্যাগ। যা ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট ফাটা দূর হয় এবং এটি ঠোঁটের শুষ্ক-ভাব দূর করে ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় রাখে।